বিয়ারিং কি কত প্রকার ও কি কি - বিয়ারিং সাইজ ক্যালকুলেটর
বিয়ারিং কাকে বলে, বিয়ারিং কত প্রকার ও কি কি? আপনি যদি বিয়ারিং সম্পর্কে ক্লিয়ার ধারণা নিতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা রকম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করি, যেখানে বিয়ারিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছোট হোক বা বড়, প্রায় প্রতিটি মেশিনেই বিয়ারিং থাকে,
যার সাহায্যে ঘর্ষণ কমিয়ে মসৃণভাবে যন্ত্রের চলাচল নিশ্চিত করা হয়। তাই আপনারা যারা বিয়ারিং সম্পর্কে নানা বিষয়ে জানতে চান তাদের কথা চিন্তা করে একটি আর্টিকেলের মধ্যে বিয়ারিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাই আর সময় নষ্ট না করে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে নিন।
সূচীপত্রঃ বিয়ারিং কাকে বলে
বিয়ারিং কাকে বলে
আমি আপনাদের সহজ ভাষায় বলার চেষ্টা করব যে বিয়ারিং কি বা কাকে বলে। বিয়ারিং হলো এক ধরনের ছোট যন্ত্র, যা কোনো জিনিস ঘুরতে সাহায্য করে। এটা মেশিনের ভেতরে বসানো থাকে, যাতে কোনো কিছু সহজে ঘুরে এবং ঘর্ষণ বা ঘষা কম লাগে।
আবার আপনারা চাইলে এ ভাবেও বলতে পারেন যেমন বিয়ারিং এমন একটি যন্ত্রাংশ, যা মেশিনকে ঘুরতে সাহায্য করে এবং ঘর্ষণ কমায়। আশা করি ক্লিয়ার হয়েছেন বিয়ারিং কাকে বলে।
বিয়ারিং কত প্রকার ও কি কি
বিয়ারিং প্রধানত ৬ প্রকারের হয়ে থাকে। যথাঃ
1. প্লেইন বিয়ারিং (Plain Bearing): এই বিয়ারিংয়ে কোনো রোলিং উপাদান থাকে না। এটি সাধারণত ধাতব পৃষ্ঠের উপর ভিত্তি করে কাজ করে এবং উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।
Plain Bearing আবার ৩ প্রকার। যথাঃ
A. Two piece bearing (দুই টুকরা বিয়ারিং)
B. Bushing bearing (বুশিং বিয়ারিং)
C. Integral bearing (ইন্টিগ্রাল বিয়ারিং)
2. রোলার এলিমেন্ট বিয়ারিং (Roller Element Bearing): রোলার এলিমেন্ট বিয়ারিং এ রিংয়ের মাঝে রোলিং উপাদান থাকে, যেমন বল বা রোলার, যা ঘর্ষণ কমায় এবং সহজেই ভার বহন করতে পারে।
Roller Element Bearing আবার দুই প্রকার। যথাঃ
A. Ball bearing (বল বিয়ারিং)
B. Roller bearing (রোলার বিয়ারিং)
Ball bearing আবার ৫ প্রকার। যথা
A. Double row ball bearing (ডাবল সারি বল বিয়ারিং)
B. Thrust ball bearing (থ্রাস্ট বল বিয়ারিং)
C. Single row ball bearing (একক সারি বল ভারবহন)
D. Self-aligning ball bearing (স্ব-সারিবদ্ধ বল বিয়ারিং)
E. Angular contact bearing (কৌণিক যোগাযোগ ভারবহন)
Roller bearing আবার ৫ প্রকার। যথাঃ
A. Gear bearing(গিয়ার ভারবহন)
B. Needle roller bearing (সুই রোলার ভারবহন)
C. Cylindycal roller bearing (নলাকার রোলার বিয়ারিং)
D. Sphering roller bearing (স্ফেরিং রোলার বিয়ারিং)
E. Carb troidal roller bearing (কার্ব ট্রয়েডাল রোলার বিয়ারিং)
3. জুয়েল বিয়ারিং (Jewel Bearing): এই বিয়ারিং ছোট আকারের হয়ে থাকে। তার জন্য এই বিয়ারিং টা ঘড়ি বা মিটারের মতো যন্ত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়। এটি লুব্রিকেন্ট ছাড়াই কাজ করতে পারে।
4. ফ্লেক্সার বিয়ারিং (Flexure Bearing): ফ্লেক্সার বিয়ারিং নমনীয় উপাদান দিয়ে তৈরি, যা ছোট গতিবিধি এবং নির্ভুলতা প্রয়োজন এমন যন্ত্রে বেশি ব্যবহার করা হয়।
5. ফ্লুইড বিয়ারিং (Fluid Bearing): এই বিয়ারিংয়ে তরল পদার্থ ব্যবহার করে ঘর্ষণ কমানো হয়। এটি উচ্চ গতি এবং ভার বহনের জন্য উপযুক্ত কাজ করে।
6. ম্যাগনেটিক বিয়ারিং (Magnetic Bearing): ম্যাগনেটিক বিয়ারিং চৌম্বকীয় শক্তির মাধ্যমে কাজ করে, যা ঘর্ষণ ছাড়াই ঘূর্ণনশীল অংশকে স্থির রাখতে সাহায্য করে।
আমি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। আমার ভাষায় আপনাদের বুজানোর চেষ্টা করেছি যে বিয়ারিং কত প্রকার ও কি কি? আপনি যদি মেকানিক্যাল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। কারণ আমি চিন্তা করেছি যে ব্লগ লেখার মাধ্যমে আপনাদের মেকানিক্যাল এর সমস্ত বিষয় তুলে ধরব যাতে আপনারা মেকানিক্যাল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারেন।
বিয়ারিং কি ধরনের কোণ
ধরেন, আপনি একটা সাইকেল চালাচ্ছেন। আপনার সাইকেলের চাকা মসৃণভাবে ঘুরছে। এর পেছনে যেই ছোট্ট জিনিসটা সবচেয়ে বেশি কাজ করছে, সেটা হলো বিয়ারিং। কিন্তু আপনি কি জানেন, বিয়ারিং কেমন কোণে বসানো হয় বা এর সাথে “কোণ” কথাটা কেন জড়িত? আজকে আমরা জানবো বিয়ারিং কি ধরনের কোণ হয়, এবং সেটা কেন গুরুত্বপূর্ণ।বিয়ারিং আর কোণের সম্পর্কটা কী?
চলুন সহজভাবে বোঝাই বিয়ারিং হচ্ছে এমন একটা যন্ত্রাংশ যেটা দুইটা বস্তুর মাঝখানে বসে ঘর্ষণ কমায় আর তাদের ঘুরতে সাহায্য করে। কিন্তু এই বিয়ারিং বসানো হয় নির্দিষ্ট এক ধরনের কোণে, যেটাকে বলা হয় কনট্যাক্ট অ্যাঙ্গেল (Contact Angle)। এই কোণটা ঠিক না হলে বিয়ারিং ঠিকভাবে কাজ করে না।বিয়ারিং সাধারণত কোন ধরনের কোণে ব্যবহৃত হয়?
বিয়ারিং মূলত নিচের তিন ধরনের কোণে বসানো হয়।- শূন্য ডিগ্রি কোণ (0°): এই কোণে বিয়ারিং শুধুমাত্র রেডিয়াল লোড নিতে পারে। অর্থাৎ, চাপ যদি সোজা নিচে বা পাশে পড়ে, তখন এই কোণ কাজে আসে।
- মাঝারি কোণ (15° - 25°): এই ধরনের কোণে বিয়ারিং রেডিয়াল এবং অ্যাক্সিয়াল—দুই ধরনের চাপই নিতে পারে। মোটরসাইকেল বা গাড়ির চাকা ঘোরানোর ক্ষেত্রে এটা খুবই কার্যকর।
- বড় কোণ (৩০° বা তার বেশি): এই কোণে বিয়ারিং অনেক বেশি অ্যাক্সিয়াল লোড নিতে পারে। যেমন যেসব মেশিনে ভারি চাপ পড়ে, সেগুলাতে এই ধরনের বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়।
কেন কোণের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ?
মনে মনে কল্পনা করেন যে, আপনি একদম সোজা করে একটা ছাতা খুললেন বাতাসে। এখন যদি বাতাস পাশ থেকে আসে, ছাতাটা সহজেই উল্টে যাবে, তাই না? ঠিক তেমনি বিয়ারিংও যদি ভুল কোণে বসানো হয়, তাহলে সেটা ঠিকভাবে ঘোরে না, নষ্ট হয়ে যায়, আর মেশিনটাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই কোণ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সিলিং ফ্যানের বিয়ারিং এর দাম
সিলিং ফ্যানের বিয়ারিং নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়েন কারণ অনেক সময় দেখা যায় সিলিং ফ্যানের বিয়ারিং নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমরা চিন্তা করি এর দাম কত ও কোথায় পাবো? নিজেই বদলাতে পারবো কি না? এই সমস্ত কথা মাথায় ঘুর পাক খায়। তাই আজকে আমরা এই প্রশ্নগুলোর সহজ উত্তর খুঁজে বের করবো, যেন আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সাধারণত, সিলিং ফ্যানের বিয়ারিং-এর দাম বাংলাদেশে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
- HCH বা HCS ব্র্যান্ডের বিয়ারিং: প্রতি পিস ৮০–১২০ টাকা।
- 6202 বা 6203 সাইজের বিয়ারিং: এই সাইজের বিয়ারিংগুলো সাধারণত ৬০–১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
- অনলাইন শপিং: দারাজের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এই বিয়ারিংগুলো সহজেই পাওয়া যায়।
যদি আপনি বিয়ারিং নিজে বদলাতে না পারেন, তাহলে একজন ইলেকট্রিশিয়ান বা টেকনিশিয়ানকে দিয়ে কাজ করালে মজুরি বাবদ ২০০–২৫০ টাকা লাগতে পারে। তাই আপনি যদি একা একা সিলিং ফ্যানের বিয়ারিং লাগাতে না পড়েন তাহলে ২০০ টাকা খরচ হতে পারে আপনার পকেট থেকে।
ফ্যানের বিয়ারিং খোলার পোলার
ফ্যানের বিয়ারিং খোলার পোলার কী?
পোলার একটি যন্ত্রাংশ, যা বিয়ারিং বা গিয়ার সহজে খুলতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত এটি ধাতব তৈরি এবং বিভিন্ন সাইজে পাওয়া যায়। সিলিং ফ্যানের বিয়ারিং খুলতে 6201, 6202, 6203 মডেলের পোলার বেশি ব্যবহার করা হয়।পোলার কেন ব্যবহার করবেন?
- নিরাপদ বিয়ারিং খোলা: হাত দিয়ে বিয়ারিং খুলতে গেলে ফ্যানের মোটর বা অন্যান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
- সময় সাশ্রয়: পোলার ব্যবহার করলে দ্রুত বিয়ারিং খোলা যায়।
- দীর্ঘস্থায়ী সমাধান: সঠিকভাবে বিয়ারিং খোলার ফলে ফ্যানের কার্যক্ষমতা বজায় থাকে।
পোলারের দাম কত?
বাংলাদেশে পোলারের দাম সাধারণত ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে হয়, যা মডেল ও মান অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে যে কোনো সময়।বিয়ারিং সাইজ ক্যালকুলেটর
আপনি যদি বিয়ারিং-এর সঠিক সাইজ নির্ণয় করতে চান, তাহলে "বিয়ারিং সাইজ ক্যালকুলেটর" আপনার জন্য একটি সহজ ও কার্যকর টুল হতে পারে। এই অনলাইন ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আপনি সহজেই বিয়ারিং-এর অভ্যন্তরীণ ব্যাস (ID), বাহ্যিক ব্যাস (OD) এবং প্রস্থ (Width) নির্ণয় করতে পারবেন।
বিয়ারিং সাইজ ক্যালকুলেটর কী?
বিয়ারিং সাইজ ক্যালকুলেটর একটি অনলাইন টুল, যা বিয়ারিং-এর বিভিন্ন মাত্রা নির্ণয়ে সাহায্য করে। আপনি যদি পুরানো বিয়ারিং-এর পরিবর্তে নতুন বিয়ারিং কিনতে চান, তবে এই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে সঠিক সাইজ নির্ধারণ করতে পারবেন।
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এই ধরনের ক্যালকুলেটর পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, Bushing MFG-এর ক্যালকুলেটরটি ব্যবহার করতে পারেন Bushing MFG এখানে আপনাকে নিম্নলিখিত তথ্য প্রদান করতে হবেঃ
- Inner Diameter (ID): বিয়ারিং-এর অভ্যন্তরীণ ব্যাস।
- Outer Diameter (OD): বিয়ারিং-এর বাহ্যিক ব্যাস।
- Length (Width): বিয়ারিং-এর প্রস্থ।
এই তথ্যগুলো প্রদান করার পর, ক্যালকুলেটরটি আপনাকে বিয়ারিং-এর সঠিক সাইজ নির্ধারণ করে দিবে খুব সহজে।
হ্রাসকৃত বিয়ারিং কাকে বলে
হ্রাসকৃত বিয়ারিং (Reduced Bearing) হলো একটি নির্দিষ্ট কোণ পরিমাপের পদ্ধতি, যা সাধারণত ৯০ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা (উত্তর বা দক্ষিণ) থেকে পরিমাপ করা হয়। এটি মূলত সার্ভেয়িং বা জরিপ কাজে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ভূমির নির্দিষ্ট বিন্দুর মধ্যে কোণ নির্ধারণ করা প্রয়োজন হয়।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি, এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি বিয়ারিং সম্পর্কিত মূল ধারণা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন। বিয়ারিং-এর প্রকারভেদ, ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা, সঠিক কোণের গুরুত্ব, এবং বিয়ারিং পরিবর্তন বা সাইজ নির্ণয়ের সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জগতে বিয়ারিং একটি মৌলিক বিষয়।
তাই এ সম্পর্কিত জ্ঞান আপনার বাস্তব জীবনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দারুণ কাজে লাগবে। ভবিষ্যতে আরও মেকানিক্যাল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজবোধ্য তথ্য জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ
মারিয়া অনলাইন ব্লকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url